এই শহরে একজন শফি সাহেব থাকতেন। সুন্দর একজন মানুষ। সর্ব অর্থে সুন্দর। গুণে, আচরণে,
অবয়বে, কর্মে সুন্দর একজন মানুষ। নিরহংকারী, অমায়িক, স্বল্পবাক;
যেন ফলভরা ছায়াঘেরা এক বিশাল বৃক্ষ। নিভৃতে এক কোণে দাঁড়িয়ে মৃদুমন্দ দোলা দিয়ে যাচ্ছেন শাখায়, পল্লবে, পাতায়।
এই
শহরে এখন আর শফি সাহেব নেই। সুন্দর মানুষটি বিদায় নিয়েছেন অনেকটা
চুপিসারে। এ শহর থেকে দূরের আরেকটি শহরের হাসপাতালে। সে শহরের লোকেরা তাঁকে
তেমন চেনে না। চিনলে খবরটি প্রথম পাতায়
ছাপতো সে শহরের পত্রিকাগুলো। ৪ কিংবা ১৫-এর পৃষ্ঠায় নয়। চ্যানেলগুলো ফলাও করে বলতো। টকশো হতো।
এ শহর, যেটি ছিল তাঁর নিজের শহর, সে শহরেও
এখন তাঁকে ক’জনে চেনেন? আমি আমার বয়েসি অনেককে (যাঁরা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি করেন) তাঁর
মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে একটু অবাক হয়েছি তারা তাঁকে চেনেন না জেনে। আমার পরবর্তী প্রজন্মের বেশিরভাগই তাঁকে চেনেন না। নামও শোনেন নি।
তবে
দুঃখ করার কিছু আর নেই মনে হয়। চটজলদির এ যুগে সবকিছু তাৎক্ষণিক পাওয়ার
বাসনায় ইঁদুর দৌড়ে অহর্নিশি ব্যস্ত। খাওয়া থেকে শুরু করে ক্যারিয়ারের চরম
শিখরে পৌঁছা সবকিছুতে চটজলদি।
পরিশ্রম, মেধা ব্যয়, ধৈর্য ধারণ অত সময় কোথায় কার হাতে আছে? ‘ধর
তক্তা মার পেরেক’- এর
এই যুগে অল্পতেই সবাই সবকিছু পেয়ে যায়। তরুণ বয়সেই যার যার ক্ষেত্রে সে সে
নক্ষত্র। তাদের হাতে সবকিছু তুলে দেবার জন্য কিংবা তাদেরকে নক্ষত্র
বানানোর জন্যেও দলে দলে অনেকেই প্রস্তুতি
নিয়ে প্রতীক্ষায়।
সালাহউদ্দিন লাভলু সাম্প্রতিক এক লেখাতে বলেছেন, ‘আগে
ছিল ঈদের নাটক। এখন নাটকের ঈদ’। সত্যিই তো আগে কেবল বিটিভিতে
দুই ঈদে দুটি নাটক হতো। থাকতো দীর্ঘ প্রস্তুতি ও প্রতীক্ষা। দেখতো সবাই। আর
এখন এক ঈদেই ডজন ডজন চ্যানেলে শত শত নাটক। কোনো প্রস্তুতিও নেই প্রতীক্ষাও
নেই। কেউ দেখে না কোনো একটি সম্পূর্ণ নাটক। কোনো একজন দর্শকের হাতে অত সময়
নেই এক নাগাড়ে দশ মিনিট একটি টিভি চ্যানেল
দেখার। কী দেখবে? কেনইবা দেখবে। চরম হাস্যকর উদ্ভট উপস্থাপনা বিভিন্ন নামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। কারা এসব বানায়, কেন বানায় কে জানে!
ভুল বললাম, জানে বিজ্ঞাপনদাতা এবং বিজ্ঞাপন প্রচারকেরা। কারণ বিজ্ঞাপন দেখানোর ফাঁকে ফাঁকে কিছুতো দেখাতে হবে! এ
যুগ মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগ। শোবিজের যুগ। আটপৌরে বাংলায় ‘দেখানোপনার যুগ’।
কাজেই এ-যুগে শফি সাহেবদের মতো মানসম্পন্ন রুচিসম্পন্ন, সজ্জন,
সংস্কৃতিসেবী মানুষদের কোনো দাম নেই কোনো
স্থান নেই কোনো পরিচয় নেই। তাঁর পরিচিতি তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা
উপদেষ্টার শ্বশুর। সর্বত্র এই পরিচিতি। সে পরিচিতিতে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে
দেখতে যান। তাঁর জানাযা হয় ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয়
মসজিদে এবং দাফনও হয় বনানীর কবরস্থানে।
ভাবনা ছিল, চট্টগ্রামে তাঁর নশ্বরদেহটি হয়তো আনা হবে, এখানে
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হয়তো রাখা হবে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে, অনেক
গুণগ্রাহী তাঁর এখনো এ শহরে আছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও পেতে পারতেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও এই নিরুচ্চার মানুষটির গুরুত্বপূর্ণ
অংশগ্রহণ ছিল। ১৯৭১ সালে তিনি তাঁর ছাপাখানা আর্ট প্রেস থেকে মুক্তিযুদ্ধের
সমর্থনে লিফলেট ছেপে দেশে বিদেশে প্রচার করতেন গোপনে। মুক্তিযোদ্ধাদের
গোপনে আশ্রয় দিয়ে অর্থ সাহায্য করে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবদান রেখেছেন।
১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় তাঁর প্রকাশিত এখলাসউদ্দিন
আহমদ সম্পাদিত শিশু পত্রিকা টাপুর টুপুর এর সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের আসন্ন
মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতাকে স্বাগত জানিয়ে লেখা হয়েছিল ‘রক্তাক্ত পথ ধরে
আসবে স্বাধীনতা’। অসীম সাহস না থাকলে সে সময় এ ধরনের কথা লেখা যায় না। এ
সাহস ছিল শফি সাহেবের অন্তরে। আচরণে তা প্রকাশ
পেত না এই সদাহাস্য, নিরহংকারী
নিভৃতচারী ও অভিজাত মানুষটির। ’৬৯ ও ’৭০ এর গণআন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের
পাশাপাশি চট্টগ্রামে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি মহলও যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে
অংশ নেয়,
তখন নেপথ্য থেকে সোচ্চার ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ শফি।
শফি সাহেবের প্রধান পরিচয়- প্রকাশক। ফিরিঙ্গি বাজারে ছিল তাঁর কিংবদন্তী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘দি আর্ট প্রেস’,
যেটি কেবল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে নয়
ভারতেও যথেষ্ট সমাদৃত ছিল। দুই বাংলার প্রথিতযশা লেখকদের লেখা গ্রন্থ এই
ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত হতো। কাজ করতেন আল মাহমুদ, সৈয়দ
শামসুল হক, শামসুর রাহমান, বিপ্রদাস বড়ণ্ডয়া, শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব,
সবিহ্উল আলম, কাইয়ুম চৌধুরী, হরিপ্রসন্ন পালসহ আরো অনেক গুণী শিল্পী সাহিত্যিক। কেউ পূর্ণ সময়ে,
কেউ অতিথি হয়ে। এ-প্রকাশনা
সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয় পাকিস্তানের প্রথম রম্য মাসিক পত্রিকা
‘অন্তরঙ্গ’। সুচরিত চৌধুরী ও সৈয়দ শামসুল হকের সম্পাদনায়। তবে আর্ট প্রেস
বা সৈয়দ মোহাম্মদ শফীর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা শিশু পত্রিকা ‘টাপুর টুপুর’
যেটি প্রকাশিত হতো শিশু সাহিত্য বিতান থেকে। সম্পাদনা করতেন গুণী শিশু
সাহিত্যিক এখলাস উদ্দিন আহমেদ যিনি ছিলেন শফী সাহেবের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু।
এখলাস সাহেবও ছিলেন ঠিক শফি সাহেবের মতোই আরেকজন নিভৃতচারী,
অমায়িক এক নিপাট ভদ্র ও বিদ্দজ্জন মানুষ।
শফি সাহেবের বাসায় ও আর্ট প্রেসে তাঁকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। সৌভাগ্য
হয়েছে তাঁর সান্নিধ্যে আসারও। এদেশের শিশু সাহিত্যে তাঁর অপরিসীম অবদান।
বাংলা সাহিত্যের (দুই বঙ্গের) অনেক
উল্লেখযোগ্য
গ্রন্থরাজি মুদ্রিত হয়েছে সৈয়দ মোহাম্মদ শফির প্রকাশনা সংস্থা ‘বইঘর’ থেকে।
‘বইঘর’ আরেকটি কিংবদন্তী। বইগুলোর প্রচ্ছদ অংকন অঙ্গসজ্জায় কাজ করেছেন
জয়নুল আবেদীন, কাইয়ুম চৌধুরী,
আবুল বারাক আলভী, রফিকুন্নবী, সবিহ্উল আলম, আবুল
মনসুরসহ প্রথিতযশা অনেক শিল্পী। বইঘরের প্রকাশিত বইগুলো এতটাই দৃষ্টি নান্দনিক হতো, হাতে নেবার সাথে সাথে শ্রদ্ধা আর মমতা যেন একীভূত হত অন্তরে। মুদ্রণ পারিপাট্য,
রুচিশীল ও ছিমছাম অঙ্গসৌষ্টব, অত্যন্ত উন্নতমানের বাঁধাই একেকটি বইকে পাঠকদের কাছে পরম আদরনীয় করে তুলতো। এত পরিশীলিত মুদ্রণ পরিপাট্য সে সময়ে তো বটেই,
আজকের যুগেও অনেক দুর্লভ। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে বাংলাদেশে বইঘরের মতো আর কোনো প্রকাশনা সংস্থা গড়ে ওঠেনি। পশ্চিমবঙ্গের বাণীশিল্প, থীমা,
অবভাস কিংবা প্রতিক্ষণ প্রকাশনা সংস্থার
প্রকাশনাগুলোই বোধকরি বইঘরের প্রকাশনার কাছাকাছি আসে। কেবল পরিচ্ছন্ন ও
রুচিস্নিগ্ধ প্রকাশনা নয়, গ্রন্থের বিষয় নির্বাচনে যে
বৈচিত্র্য, মান, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োজন সেসব গুণাবলী বইঘর ও শফী সাহেবের যেন সহজাত ছিল।
মনে পড়ে, নিউমার্কেটের দোতলায় বইঘরের বিশালায়তনের সেই বিপনীকেন্দ্রের স্মৃতি। কোলাহলহীন পরিবেশে অজস্র গ্রন্থের
সমাহার, যেন
বই এর একটি রাজ্য। বিপনীকেন্দ্রের কর্মীরাও ছিলেন অত্যন্ত সজ্জন ও সহযোগী
মনোভাবাপন্ন। কৈশোরে ও প্রথম যৌবনে নিয়মিতভাবে বইকেনার সামর্থ্য ছিল না, কিন্তু
প্রায়ই যেতাম বইঘরে। কর্মীরা এ-বই সে-বই এগিয়ে দিতেন, বই সম্বন্ধে
বলতেন, কিনতে পারছিনা দেখে মনক্ষুন্ন হতেন না, হয়তো তাঁরা বুঝতেন কিনতে আসিনি কিংবা কিনতে পারবো না,
কিন্তু বই এর চাহিদা ও আগ্রহটুকু চাগিয়ে
দিতেন মনে। কে জানে প্রকাশনা ও দোকানের মালিকের কোনো প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা
ছিল কিনা এর নেপথ্যে। আর্ট প্রেসের মতো, বইঘর ও
শিশুসাহিত্য বিতান এই দুই প্রকাশনা সংস্থার মতো, ‘বইঘর’ নামের বিশাল বইয়ের দোকানটিও ছিল কিংবদন্তীসম। চট্টগ্রামের অহংকার, সারা দেশও
সে সব প্রতিষ্ঠানের কথা জানতো।
দি
আর্ট প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালে। এটি ছিল সেসময় এদেশের বৃহৎ
মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠান। আর্ট প্রেস কেবল একটি প্রিন্টিং হাউস ছিল না, ছিল
এ শহরের, এদেশের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির এক মিলনকেন্দ্র।
মুদ্রণশিল্পে
এদেশের পথিকৃৎ সৈয়দ মোহাম্মদ শফি চট্টগ্রামের শিল্পসংস্কৃতি জগতের একজন
নিভৃতচারী সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এ শহরের প্রতিটি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তাঁর
নেপথ্য অংশগ্রহণ থাকতো।
চলচ্চিত্র সংসদ চর্চার সূত্রে তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ। ১৯৮০ ও ৯০ এর দশকে
চলচ্চিত্র সংসদ সংক্রান্ত অনেক মুদ্রণ সামগ্রী তিনি তাঁর প্রেস থেকে কখনো
নামমাত্র দামে, কখনো বিনে পয়সায় ছেপে দিয়েছেন। তিনি
চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র সংসদের সদস্য ছিলেন। নিয়মিত চাঁদা দিতেন। প্রদর্শনীতে অনুপস্থিতির বিষয়ে অনুযোগ করলে স্মিতহাস্যে বলতেন, ‘লিস্ট থেকে নাম কেটে দিও না’। সে সময়ে কলকাতা ও লন্ডন থেকে বেশ কজন চলচ্চিত্র
তাত্ত্বিক ঢাকা ও চট্টগ্রামে এসেছিলেন। চট্টগ্রামে যখন তাঁদের আমরা আমন্ত্রণ জানাতাম, শফি সাহেবের বাড়ি ছিল তাঁদের সকলের থাকবার জায়গা। কোনোদিন তাঁকে দু’বার বলতে হয়নি। শুধু বলতেন,
‘ওনাদের পছন্দ অপছন্দ জেনে আমাদের জানিয়ে
দিও’। আমাদের মানে তাঁর পরিবার। তাঁর স্ত্রীও তাঁরই মতো আরেকজন সহৃদয়া
মানুষ। তাঁদের একমাত্র পুত্রও পিতা মাতার অবিকল প্রতিরূপ। অত্যন্ত সুদর্শন
‘বনি’ ছিল আমাদের সমবয়সী এবং বন্ধুসম। অনেক সময়
নিজে গাড়ি চালিয়ে তাদের বাসার অতিথিদের স্টেশনে, বিমান বন্দরে পৌঁছে দিয়ে আসতো সাগ্রহে। একই অভিজ্ঞতা অন্যান্য মাধ্যমের সংস্কৃতিকর্মীদের বেলাতেও আছে অবশ্যই।
চট্টগ্রামের
চারুকলা কলেজ প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে শফি সাহেবের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। কলেজ
প্রতিষ্ঠার প্রথম সভাটিও হয় আর্ট প্রেসে ১৯৭২ সালে।
১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে শফি সাহেবদের ব্যবসা মন্দাভাব হতে শুরু করে যার নেপথ্যের প্রধান কারণ এদেশের শিল্প সাহিত্যের
জগতের অধোগতি ও ধস। মানহীন, সস্তা
বাজারি মুদ্রণ ও সাহিত্য সৃষ্টি কোনোটার সাথেই খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি সৈয়দ
মোহাম্মদ শফির পরিবার। একে একে বন্ধ হয়ে যায় প্রকাশনা সংস্থা দুটি,
গ্রন্থবিপনীকেন্দ্র বইঘর এবং প্রকাশনা
সংস্থা দি আর্ট প্রেস। তিনিও ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চলে যান আরো নেপথ্যে।
আর আমরা স্বার্থপরেরা তাঁর আর কোনো খোঁজখবরও রাখিনি, প্রয়োজন
ফুরিয়ে যাওয়ায়।
কিন্তু প্রিন্টিং টেকনোলজির উৎকর্ষ সাধন ও তার বাস্তবায়নে শফি সাহেবের নাম অলক্ষে মিশে থাকবে। অনুসন্ধানী পাঠক, প্রকাশক,
লেখক ঠিকই তাঁকে স্মরণে রাখবেন। সৈয়দ
মোহাম্মদ শফি বাংলাদেশে শিশুসাহিত্য প্রকাশনার ওপর ইউনেস্কো থেকে প্রথম
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি। শিশুসাহিত্য, সামাজিক কর্মকান্ড
ও প্রকাশনায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮১ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে ‘শ্রেষ্ঠ প্রকাশক’-এর স্বর্ণপদক পান তিনি। ইউনেস্কো তাঁকে ‘বেস্ট পাবলিসার’- এর
সম্মাননা
দেয়। লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল ১৯৮৪ সালে তাঁকে প্রথম এশিয়ান নাগরিক হিসেবে
‘কি অব স্টেট’ পদক প্রদান করে। রাষ্ট্রীয় কিছু শীর্ষ পদক আছে আমাদের। কত
জনা পায়। কিন্তু এসব গুণী মানুষেরা বঞ্চিত থাকেন বরাবর।
সৈয়দ
মোহাম্মদ শফির জন্ম ১৯৩৩ সালের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে।
সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হলেও অত্যন্ত কষ্ট করে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত হতে
হয়েছিল। পরিশীলিত রুচিবোধে সমৃদ্ধ
মানুষটির শুচিস্নিগ্ধতা তাঁর ব্যক্তি জীবনে সবসময় বিরাজিত থাকতো। তাঁর অফিস, প্রেস, দোকানের মতো তাঁর বাড়িটিও ছিল অত্যন্ত পরিপাটি।
বাহুল্য বর্জিত কিন্তু অত্যন্ত অভিজাত। পূর্ণেন্দ্র পত্রী ও চিত্তানন্দ দাশগুপ্ত (সস্ত্রীক)কে চট্টগ্রামে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনার পর
তাঁদের বাড়িতে আমরা রেখেছিলাম যথারীতি। এঁরা শফি সাহেবের আতিথ্যের ও আভিজাত্যের এতটাই গুণমুগ্ধ হয়েছিলেন যে, পরবর্তী সময়ে তাঁদের বিভিন্ন লেখায় তার সপ্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন।
শফি
সাহেব যখন মুদ্রণ শিল্পে কাজ করেছেন তখন এখনকার মতো এত সুযোগ সুবিধা ছিল
না। লেটারপ্রেসেও ছিল তাঁর অধিকাংশ কাজ। শেষের দিকে অফসেট প্রকাশনা করলেও
এত সুযোগ তখনো হয়নি। অথচ স্রেফ
মেধা ও আন্তরিকতার জোরে তিনি সেসব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে উন্নত প্রকাশনায়
পথিকৃৎ হতে পেরেছিলেন। যাঁর সাথে যুক্ত হয়েছিল তাঁর সততা, পরিশ্রম
ও নিরহংকার। অন্য কাউকে অনুসরণের সুযোগ তিনি পাননি। নিজেই
তৈরি করেছিলেন তিনি নিজেকে আমরাই যেন অনুকরণ করি তাঁকে। তাঁর উত্তরাধিকার
ধারণ করি কর্মে আর আচরণে। আজ যখন চট্টগ্রামের ‘বাতিঘর’ ঢাকার ‘পাঠক সমাবেশ’
দেখি তখন বই ঘরের সেই ফেলে আসা স্মৃতি যেন দু’চোখ ভরে ভেসে ওঠে। মনে হয়
বইঘর হারিয়ে যায়নি। যাবে না কোনোদিন। ২০১৪ সালের
৯ অক্টোবর শফি সাহেবও হারিয়ে যাননি। থেমে যায়নি তাঁর পথ চলা। নতুন
উত্তরাধিকারির মধ্যে তাঁর পুনজ্জীবন ঘটবে। জীবন যে নিরন্তর।
সুত্র: শৈবাল চৌধুরী (দৈনিক আজাদী)
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন